“মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান”

  • Home
  • “মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান”
Shape Image One
“মহাবিশ্বের  সবচেয়ে শীতলতম স্থান”

রহস্যেঘেরা আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্বে রয়েছে অসংখ্য রহস্যময় গ্রহ, নক্ষত্র এবং স্থান। কোনো স্থান যদি হয়ে থাকে উষ্ণ তেমনি অন্যদিকে রয়েছে শীতলতম স্থানও। রহস্য এবং বৈচিত্র্যে ঘেরা এই মহাবিশ্বে এমন অনেক অদ্ভুত বস্তু বা গ্রহ বা নক্ষত্র রয়েছে যারা আজও আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। কেমন হবে যদি আজকে আমি আপনাদেরকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান সম্পর্কে ধারণা দেই তাহলে? নিশ্চয়ই তা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর হবে তাতে কোনো সন্দেহই নেই। চলুন তবে জেনে আসা যাক আমাদের এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান সম্পর্কে।

চিত্রঃ “Boomerang Nebula.”

আমাদের এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থানটি হলো “Boomerang Nebula.” এটি আমাদের থেকে ৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে “Centaurus Constellation এ অবস্থিত। এই Boomerang Nebula টি হলো একটি প্রটোপ্লানেটারি নেবুলা। এই নেবুলাটি “Bow Tie Nebula” নামেও পরিচিত।  এই নেবুলাটি আবার “LEDA 3074547” নামেও শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এই নেবুলাটির তাপমাত্রা 1k (-272.15; -457.87)। আর এই কারণেই যেই স্থানে এই নেবুলাটির অবস্থান সেই স্থানটিকে বলা হয়ে থাকে আমাদের এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান। এই স্থানটিরব্যাসার্ধ ১ আলোকবর্ষ। এই নেবুলাটি Planetary Nebula দিকে বিকশিত হওয়াএকটি তারকা সিস্টেম বলে ধারনা করা হয়। এই নেবুলাটি এখনো গ্যাসের বহিঃপ্রবাহের কারনে গঠিত হচ্ছে আর এই নেবুলাটির কেন্দ্রে যেই তারাটির অবস্থান তার জীবদ্দশা এবং ভর একদম শেষ পর্যায়ে এবং এটি নেবুলাটির মধ্যে এক ধরণের ধুলো নির্গত করে যা নক্ষত্ত্রালোক দ্বারা প্রতিফলন ঘটায়। এই নির্গত হওয়া গ্যাসের গতি ১৬৪ কি.মি./সে এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এটি মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এবং খুব দ্রুত মহাবিশ্বের বাইরে তা ছড়িয়ে পড়বে। আর গ্যাসের এই প্রসারিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটছে নেবুলার মধ্যে বিদ্যমান অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রার কারণে। ১৯৮০ সালে “Keith Taylor এবং Mike Scarrott” “Siding Spring Observatory” থেকে “Anglo -Australian Telescope” থেকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করার পর থেকেই এই নেবুলাটিকে তাঁরা “Boomerang Nebula” নামকরণ করেন। এই নেবুলাটি অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে দেখা সম্ভব না কিন্তু ১৯৯৮ সালে “Hubble Space Telescope” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তারিত তথ্যের সাথে এই নেবুলাটির ছবি তোলে।  ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞানীরা চিলিতে ১৫ মিটারের “Swedish ESO Submillimetre Telescope” ব্যবহার করে ঘোষণা করে যে এই নেবুলাটি যে স্থানে অবস্থিত সেই স্থানটি আমাদের এই মহাবিশ্বের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শীতলতম স্থান। এমনকি গবেষণাগারে তৈরী করা সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও এই স্থানটি অত্যন্ত শীতলতম। এই স্থানটির তাপমাত্রা -272 যা “পরমশূন্য তাপমাত্রার চেয়ে 1 উষ্ণ। কারণ আমরা জানি পরমশূন্য তাপমাত্রা হলো -273. এমনকি Big Bang এর সময়কার তাপমাত্রা এই শীতলতম স্থানের তাপমাত্রার থেকে বেশি এবং উষ্ণ ছিলো। সম্প্রতি ২০১৩ সালে “Atacama Large Millimetre Array (ALMA)” নামক রেডিও ইনফেরোমিটার থেকে পর্যবেক্ষণ করে এই নেবুলার  ব্যাপারে একটি নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হয়। এই নেবুলাটির সর্বশেষ দুটি স্তর একটি ঘন গোলাকার ঠাণ্ডা গ্যাস দ্বারা আবৃত এবং যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য  হলো “Sub-millimetre Radio Wavelengths.” এই নেবুলাটির বহিঃপ্রাঙ্গন ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে থাকে। সম্প্রতি ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে আরেকটি নতুন তথ্য আবিষ্কার হয় আর তাহলো নেবুলাটির কেন্দ্রে অবস্থিত তারকাটি হলো একটি মরণশীল লালদৈত্য তারকা (Red Giant Star) আমি জানি অনেকক্ষণ ধরে আপনাদের মনে একটি প্রশ্নের উদয় হয়েছে আর তাহলো এই “Nebula” আবার কি জিনিস? তাহলে চলুন এবার একটু এই নেবুলা  সম্পর্কে জেনে আসা যাক।

আমাদের এই মহাবিশ্বে বিদ্যমান রয়েছে নানারকমের গ্যাস। আর তার মধ্যে Hydrogen, Helium, Dust এবং অন্যান্য আয়নিত গ্যাস দিয়ে তৈরী হয় একটি মেঘের আধার। আর এই মেঘের আধারের নামই হলো Nebula যাকে বাংলায় বলা হয় “নিহারীকা।“ Nebula বা নীহারিকা এই গ্যাস এবং ধুলোর মেঘ। এই নেবুলাগুলো অত্যন্ত বিশাল আকারের হয়ে থাকে। কোনো কোনোটির ব্যাসার্ধ আবার ১০০ আলোকবর্ষও হয়ে থাকে। নানা ধরনের অসংখ্য নেবুলা রয়েছে আমাদের এইবিশাল মহাবিশ্বে। যেমনঃ Crab Nebula, Horse Nebula, Flame Nebula, Lagoon Nebula ইত্যাদি। এমনি অগণিত রহস্যেঘেরা সব নক্ষত্র, গ্রহ, গ্যালাক্সির চাদরে মোড়া আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্ব। যার প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস থেকে শুরু করে বিশাল গ্রহের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনাবিষ্কৃত গভীর রহস্য। আমরা আমাদের এই মহাবিশ্বের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশই এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। বাকি বিশাল অংশ জুড়ে এখনো অনেক অজানা রহস্য আজও আবিষ্কৃত হওয়ার জন্য ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছে। হয়তো বিজ্ঞানের উন্নতির ধারা অভ্যাহত থাকার সাথে সাথে তা ভবিষ্যতে উন্মোচিত হবে। আর আমরাও সেই লুকায়িত রহস্যের উন্মোচনে তথ্য জানার নেশায়  সবসময় মত্ত্ব হয়ে বসে আছি ঐ আকাশের পানে চেয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!