“টাইম ট্রাভেল গাণিতিকভাবে সম্ভব (Time Travel Is Mathematically Possible)”

টাইম ট্রাভেল এই শব্দটির সাথে অনেকেই আমরা যেমন পরিচিত, তেমনি আবার অনেকেই অপরিচিত । তবে বর্তমান বিশ্বে যেই গতিতে এই টাইম ট্রাভেলকে নিয়ে যত জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হচ্ছে এই টাইম ট্রাভেলের নাম শুনাটা ততোটাই স্বাভাবিক। আমরা অনেকেই জানিনা কী এই টাইম ট্রাভেল । তবে আজ আমি এর বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যায় যাবো না । অন্য আরেকটি আর্টিকেলে এই টাইম ট্রাভেলকে নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো। টাইম ট্রাভেল শব্দটি শুনেই আমরা বুঝতে পারছি যে এর অর্থ “কাল বা সময় পরিভ্রমণ।“ অর্থাৎ এই টাইম ট্রাভেল দ্বারা আমরা আমাদের অতীতে কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে ভ্রমণ করতে পারবো।

যাইহোক, আজ আমরা জানতে চলেছি একটি নতুন গবেষণা সম্বন্ধে। একটি নতুন গবেষণার ফলাফল বলছে যে টাইম ট্রাভেল বাস্তবে এখনো প্রমাণিত না হলেও তা গাণিতিকভাবে প্রমাণিত। তবে চলুন জেনে আসা যাক এই নতুন গবেষণা সম্পর্কে।

পদার্থবিজ্ঞানীরা একটি নতুন গাণিতিক মডেল তৈরী করেছেন যার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে টাইম ট্রাভেল সত্যি সত্যি গাণিতিকভাবে প্রমাণিত। তাঁরা তাঁদের এই হাইপোথেটিকাল তত্ত্বকে প্রমাণ করার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন আইনস্টাইনের সেই ঐতিহাসিক “Theory of General Relativity” বা “সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের” এবং তাঁদের এই হাইপোথেটিকাল তত্ত্বের নাম দিয়েছেন “Traversable  Acausal Retrograde in Space-time ( TARDIS )”

Bending Time:

আইন্সটাইন একটি তত্ত্ব দিয়েছেন আর তাহলো “সময় আপেক্ষিক এবং নমনীয়” অর্থাৎ সময়কে বাঁকানো যায়।“ আইনস্টাইন তাঁর এই তত্ত্ব প্রকাশ করার আগে থেকেই মানুষজন এই টাইম ট্রাভেলের সম্ভাবনা নিয়ে যত জল্পনা-কল্পনা শুরু করে দিয়েছিলো। এমনকি সায়েন্স ফিকশন সব ছবি এবং বইগুলোও এই টাইম ট্রাভেলের রূপকথা দিয়ে পরিপূর্ণ। কেউ কেউতো আবার টাইম ট্রাভেলের রূপকথাতে টাইম ট্রাভেলকে ঘটান একটি টাইম মেশিন দ্বারা।দুইজন পদার্থবিদ মনে করেন যে, এখনই উপযুক্ত সময় সেই কাল্পনিক টাইম মেশিনকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে নিয়ে আসার জন্য। University of British Columbia এর বিশিষ্ট তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ Ben Tippett UBC এর সংবাদ প্রকাশে বলেন,

“মানুষ টাইম ট্রাভেলকে ফিকশনের মতোই ভাবে, আমরা এটাকে অসম্ভব বলে মনে করি কারণ আমরা আসলে এটি করিনা। কিন্তু গাণিতিকভাবে এটি সম্ভব।“

প্রয়োজনীয়ভাবে Tippett এবং University of Maryland এর জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী David Tsang টাইম ট্রাভেলকে প্রমাণ করার জন্য যেই গাণিতিক মডেলটি তৈরী করেছেন সেখানে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন। তাঁদের দুইজনের প্রকাশিত একটি পেপার “Journal Classic এবং Quantum Gravity” এ প্রকাশিত হয় যেখানে তাঁদের পেপারের Abstract অংশটি ছিলো,

“Backwards and forwards through time and space as interpreted by an external observer.”

তাঁরা একে নাম দিয়েছেন “TARDIS.

সম্ভাব্য কিন্ত এখনো সম্ভব নয়ঃ

চিত্রঃ “Tippett এবং Tsang এর দেয়া টাইম ট্রা্ভেলের তাত্ত্বিক মডেল”

Tippett তাঁর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেন যে,

“আমার টাইম মেশিনের মডেলটি যাত্রীদের জন্য সময়কে বৃত্তাকার পথে বাঁকিয়ে দেয়, কোনো সরলরৈখিক আকারে নয় এবং এই বৃত্তটিই আমাদেরকে অতীতে নিয়ে যাবে।“

চিত্রঃ  “Tippett এবং Tsang এর টাইম ট্রাভেল এর গবেষণা পত্র”

আমাদের মহাবিশ্বে যেমন অধিক ভারী কোন বস্তুর কারণে স্থান-কাল বেঁকে যায় তাঁদের তত্ত্ব দ্বারাও এমনটিই ধারণা করা হয়। Tippett এবং Tsang এর জন্য TARDIS হলো একটি স্থান-কাল জ্যামিতি “bubble” যা আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলে। তাঁরা তাঁদের পেপারে লিখেছেন যে,

“এটি একটি বাক্স যা স্থান-কালের মাধ্যমে বৃত্তাকার পথ বরাবর “সামনের দিকে এবং পিছনের দিকে” ভ্রমণ করে। “

দুর্ভাগ্যবশত, এখনো এই টাইম মেশিনটি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

Tippett ব্যাখ্যা করেন যে,

“এই টাইম মেশিনটি গাণিতিকভাবে প্রমাণিত কিন্তু এখনো এটি বাস্তবে নির্মাণ করা সম্ভব নয় কারণ আমাদের উপকরণ প্রয়োজন যাকে আমরা বলি, “Exotic Matter.” এই উপায়ে স্থান-কালকে বাঁকানো অসম্ভব কিন্তু তাঁদের আবিষ্কার হওয়ার নিশ্চয়তা এখনো আছে।“

যাইহোক, কিছু মানুষ মনে করেন যে, টাইম মেশিন কখনো সম্ভব নয় কারণ টাইম ট্রাভেল নিজেই কখনো সম্ভব নয়। সময় এবং শক্তির মাঝে একটি গভীর কাছাকাছি সম্পর্ক রয়েছে যেটির কারণে টাইম ট্রাভেল অভাবনীয় বলে মনে করা হয়।

যাইহোক না কেন তা হতে পারে । তবে একটি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সকলেই একমত আর তাহলোঃ

“স্থান-কাল নিয়ে পড়াশোনা করা যেমন চিত্তাকর্ষক ঠিক তেমনি সমস্যাযুক্ত এবং অনিশ্চিত।“

যাইহোক, তাঁদের এই তত্ত্বই একমাত্র তত্ত্ব নয় যেটি বলছে টাইম ট্রাভেল সম্ভব।

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমনঃ Photon Simulation সমর্থন করে যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব। আরেকটি তত্ত্ব বলছে সময় নামক সম্ভাব্য কণা সম্পর্কে। বিজ্ঞানের উন্নতির ধারা দিন দিন যত বৃদ্ধি পাবে টাইম ট্রাভেলের বাস্তবিক প্রমাণ হওয়ার সম্ভাবনাও ততো বৃদ্ধি পাবে। আর সেই অপেক্ষাতেই সমস্ত বিজ্ঞানীদের সাথে আমরাও পথ চেয়ে বসে আছি কারণ হয়তো আমরা এই টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীতে যেয়ে আমাদের ভুলগুলো শুধরে আসতেপারবো অথবা ভবিষ্যতে যেয়ে দেখে আসতে পারবো যে আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল নাকি অন্ধকার। আর সেই দিনটির অপেক্ষায় আমরা আজও দিন গুণে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!